উটাহ মরুভূমির ধাতব বস্তু যা বর্তমানে আলোড়ন সৃষ্টি করে রেখেছে

পৃথিবীতে প্রতিদিন অদ্ভুতরকম ঘটনা ঘটতেই থাকে। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা সংবাদমাধ্যমের দ্বারা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি এরকমই একটি ঘটনা চলতি ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সমস্ত সংবাদমাধ্যম এর শিরোনাম দখল করে নেয়। এই ঘটনাটি ইন্টারনেটে এর দুনিয়াতে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে রেখেছে।

উটাহ মরুভূমির ধাতব বস্তু

এই আর্টিকেলে আমি আপনাদের জানাতে চলেছি কিভাবে আমেরিকার উটাহ মরুভূমিতে পাওয়া একটি অজানা ধাতব বস্তু সমগ্র ইন্টারনেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে রেখেছে। চলতি বছর ২০২০ এর ১৮ নভেম্বর কয়েকজন বন দফতর বিভাগের কর্মী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ মরুভুমির ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার নিয়ে সার্ভে চালাচ্ছিল। সেইসময়ই তাদের চোখে পড়ে জমিতে একটি চকচকে বস্তু।

ধাতব বস্তু

হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং করিয়ে তারা যখন মাটিতে নামে তখন তারা দেখতে পায় একটি অদ্ভুত চকচকে ধাতব মনোলিথ জমির মধ্যে পুঁতে রাখা আছে। এই ধাতব মনোলিথটি নিখুঁত ত্রিভুজ আকৃতির। ৯.৫ ফুট উচ্চতা ও ২ ফুট চওড়া বাহুবিশিষ্ট এই ত্রিভুজাকৃতি ধাতব প্রিজমটির ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে যায়। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে বিভিন্ন মুখ্য সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে। ভাইরাল ভাবে ছড়িয়ে পরে সোশ্যাল মিডিয়া গুলিতে।

সামনে এগিয়ে যেতে আইনস্টাইনের ১২টি উক্তি

নেটিজেনদের মধ্যে অনেকেই এই বস্তুটিকে বহির্জাগতিক বা ভিনগ্রহীদের থেকে আসা বলে মন্তব্য করতে থাকে। এর সাথে অনেকেই A Space Odyssey তে দেখানো মনোলিথ এর মিল আছে বলে মনে করতে থাকেন। যা কিনা গল্পে বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান ভিনগ্রহী প্রাণীদের দ্বারা তৈরী মেশিন। এরই মধ্যে সেই জায়গায় ভিড় হতে শুরু করে বিভিন্ন উৎসুক পর্যটক, ইউটিউবার ও ভিনগ্রহী উৎসাহীদের।

নতুন করে হৈচৈ ফেলে দেয়

কিন্তু এসব এর মধ্যেই হঠাৎই ২৭ শে নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৮ টার পর ধাতব মনোলিথটি গায়েব হয়ে যায়। এই ঘটনা আবার নতুন করে হৈচৈ ফেলে দেয় নেটদুনিয়াতে এবং সংবাদমাধ্যম গুলিতে। এই ঘটনার ঠিক একদিন পরে রোমানিয়াতে বাটকা দোয়ামনেই পাহাড়ের ওপরে একই রকম একটি ধাতব মনোলিথ খুঁজে পাওয়া যায়। নেটদুনিয়াতে যথারীতি আবার শোরগোল পড়ে যায়। ঠিক একদিন পর এই বস্তুটিও গায়েব হয়ে যায়।

ধাতব বস্তু

আর হ্যাঁ আপনি ঠিক ধরেছেন নেটদুনিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতে লোকজনের যা কাজ, শোরগোল করা, সেটাই হচ্ছে। তাহলে একটু এই রহস্যের বিশ্লেষণে আসা যাক। উটাহ মরুভূমিতে যে মনোলিথটি পাওয়া গেছিলো তা আসলে ওই জায়গায় কেউ বেআইনিভাবে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে কোনো এক সময়ে রেখে গিয়েছিলো। কে বা কারা এই বস্তুটিকে ওখানে রেখে গিয়েছিলো এটা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।

জীবন যেখানে যেমন, পৃথিবী সেখানে তেমন

তবে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় স্যাটেলাইট ইমেজ এর মাধ্যমে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে যে বনবিভাগের কর্মীদল সেটিকে খুঁজে পায় তার পরেই এটি সংবাদমাধ্যম ও ইন্টারনেটের নজরে আসে। এই উটাহ মরুভূমিতে পাওয়া বস্তুটিকে খুব নিখুঁতভাবে বানানো হয়েছে। এটি ভেতরে যে ফাঁপা তা তো বোঝাই যাচ্ছিলো। এটা ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিলো যে এই বস্তুটি মনুষ্যনির্মিত কিন্তু তা সত্বেও একদল অতি উৎসাহী মানুষজন এটাকে বহির্জগৎ থেকে বা ভিনগ্রহীদের থেকে উদ্ভূত বলে দাবি করতে থাকে।

স্যাটেলাইট ইমেজ এর মাধ্যমে

সংবাদমাধ্যমগুলিও কোনোভাবেই কম যায়না, তারাও এটিকে অদ্ভুত জিনিস বলে দাবি করে নিজেদের দর্শকবৃদ্ধির চেষ্টা করতে থাকে। এই ধাতব বস্তুটি যখন উধাও হয়ে যায় তার পরে এই ছবিগুলি ভালো করে লক্ষ্য করুন। এর বেস প্লেটটা দেখুন, এটি খুব সুন্দর নিপুন ভাবে রিবেট করে স্টিলের পাত জোড়া লাগিয়ে বানানো হয়েছিল।

এবার যে একটি প্রচার চালানো হয়েছিল হঠাৎ করে এটি গায়েব হয়ে গেছে তাও সত্যি নয়। এই ছবিগুলি দেখুন ভালোভাবে, কেউ বা করা বস্তুটিকে রাতের অন্ধকারে চুপিসারে সরিয়ে নিয়েছিল এবং এটি গোপন ভাবে রেকর্ড হয়েছিল কোনো এক ব্যক্তির ক্যামেরাতে।

তাহলে লোকে কি বলবে ? জীবনে সফল হতে নিজের মনের কথা শোন

এবার আসি রোমানিয়াতে পাওয়া মনোলিথটিতে। এই মনোলিথটিকে তো কেউ ঠিক উটাহ তে পাওয়া মনোলিথ এর অনুকরণ করে বানিয়ে রেখেছে। কেন বলছি কারণ আপনি দেখুন এর স্টিল ওয়েল্ডিং, কাটিং, পলিশিং খুবই কাঁচা হাতের কারিগরের দ্বারা করা হয়েছে। দেখুন ভালো করে ছবিতে যে এটা তো একেবারেই স্পষ্ট। এটা একদল কিছু লোকের কাজ যারা সংবাদমাধ্যমের নজর ঘোরাবার একটি সফল চেষ্টা করেছে।

ঠিক একই রকমভাবে একই উদ্দেশ্য নিয়ে এটিকেও পরে গায়েব করে দিয়েছে। তাই গুজবে একেবারেই কান দেবেননা এটি অবশ্যই কোনো ভিনগ্রহীর কাজ নয়। অর্থাৎ এটা যাদের কাজ তারা এই গ্রহেরই লোকজন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী নতুন একটি তৃতীয় মনোলিথ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে অবস্থিত এটাস্ক্যাডের শহরে একটি পাহাড়ের ওপরে পাওয়া গেছে। এটি অবশ্য দেখতে একেবারে উটাহ তে পাওয়া প্রথম মনোলিথটির মতো। দেখা যাক, এটিও হয়তো গায়েব হয়ে যাবে আর অন্য কোনো জায়গায় আবার খুঁজে পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *