প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ছুটতে হবে স্বপ্নের পিছুপিছু এ পি জে আব্দুল কালাম

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পুরমানু বিজ্ঞানী ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামের ছোটবেলা কেটেছে প্রচণ্ড কষ্ট করে। তাঁর বাবা জয়নুল-আবেদিন একজন নৌকার মাঝি এবং মা আশিয়াম্মা একজন গৃহবধূ ছিলেন। খুব গরীব পরিবারের সন্তান আব্দুল কালাম।

এ পি জে আব্দুল কালামের জীবন থেকে তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক কিছু কথা

পরিবারের দারিদ্র্যতা তার পড়াশুনার পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। বিদ্যালয়ে ছুটির পর তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করে রোজগার করতেন। প্রচণ্ড স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম।

এ পি জে আব্দুল কালামে

ভালোবাসতেন স্বপ্ন দেখতে, আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ছুটে চলতেন সেই স্বপ্নের পিছুপিছু। এভাবেই এগিয়ে যেতেন তিনি। স্বপ্ন শুধু নিজে দেখেই থেমে যেতেন না, সেই স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিতেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। এমনকি মৃত্যুর কিছুক্ষন আগেও সেই স্বপ্নের কথাই বলছিলেন একঝাক শিক্ষার্থীদের সাথে। তারপর ঢলে পড়েছিলেন মৃত্যুর কোলে।

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পেছনের গল্প জো বাইডেন

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও খ্যাতিমান এই পরমাণুবিজ্ঞানী সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন শিক্ষার্থীদের সাথে সময় কাটাতে। তাদের মনে আলো জ্বালাতে চাইতেন তিনি। জীবনে অনেক চড়াই উৎরাই পার করতে হয়েছে তাকে। জীবন থেকে পেয়েছেন অনেক শিক্ষা।

আমরা থাকতাম রামেশ্বরম শহরে। এখানে আমাদের পরিবার বেশ কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছিল। আমার বয়স তখন মাত্র ১০ বছর। আমাদের সংসারে পাঁচ ভাই, পাঁচ বোন। তাদের মধ্যে তিনজনের আবার নিজেদেরও পরিবার আছে, সব মিলিয়ে এক এলাহি কাণ্ড। আমার দাদি ও মা মিলে সুখে-দুঃখে এই বিশাল সংসার সামলে রাখতেন।

এ পি জে আব্দুল কালামের পড়াশোনা

আমি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে অঙ্ক শিক্ষকের কাছে যেতাম। বছরে মাত্র পাঁচজন ছাত্রকে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন। আমার মা আশিয়াম্মা ঘুম থেকে উঠতেন আমারও আগে। তিনি আমাকে গোসল করিয়ে, তৈরি করে তারপর পড়তে পাঠাতেন। পড়া শেষে সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি ফিরতাম। তারপর তিন কিলোমিটার দূরের রেলস্টেশনে যেতাম খবরের কাগজ আনতে।

এ পি জে আব্দুল কালামে

কাগজ বিক্রি শেষে সকাল আটটায় ঘরে ফিরলে মা নাশতা খেতে দিতেন। সন্ধ্যাবেলা স্কুল শেষ করে আবার শহরে যেতাম লোকজনের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে। সেই বয়সে আমার দিন কাটত শহরময় হেঁটে, দৌড়ে আর পড়াশোনা করে। আমার মা আমাদের জন্য রান্না করতেন।

চীনের বিজ্ঞানী দ্বারা তৈরিকৃত ‘কৃত্রিম সূর্যের’ ব্যবহার ও তৈরির ইতিহাস

তিনি সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবার তৈরি করতেন। এক রাতে তিনি বাবাকে এক প্লেট সবজি আর একেবারে পুড়ে যাওয়া রুটি খেতে দিলেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখার জন্য। কিন্তু বাবা চুপচাপ রুটিটা খেয়ে নিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন স্কুলে আমার আজকের দিনটা কেমন গেছে।

পোড়া রুটিই আমার পছন্দ

আমার মনে নেই বাবাকে সেদিন আমি কি উত্তর দিয়েছিলাম কিন্তু এটা মনে আছে যে, মা পোড়া রুটি খেতে দেয়ার জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এর উত্তরে বাবা মা’কে যা বলেছিলেন সেটা আমি কোনদিন ভুলব না। বাবা বললেন, ‘প্রিয়তমা, পোড়া রুটিই আমার পছন্দ।

জীবন নিয়ে ডোনাল্ট ট্রাম্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি যা ব্যাক্তির চলার পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম

পরবর্তীতে সেদিন রাতে আমি যখন বাবাকে শুভরাত্রি বলে চুমু খেতে গিয়েছিলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তিনি কি আসলেই পোড়া রুটিটা পছন্দ করেছিলেন কিনা। বাবা আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, তোমার মা আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া একটা পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়।

ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি

জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি। আমি কোনক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর সবার মতোই আমিও জন্মদিন এবং বিভিন্ন বার্ষিকীর তারিখ ভুলে যাই। এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে, আমাদের একে অপরের ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে।

জীবন খুবই ছোট প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেইহয় না। যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *