অনেকদিন পর মনে হলো নির্মাণশৈলীর, রুচিশীলতায় বড় পরিবর্তন আসেছে

অনেকদিন পর মনে হলো ভালো নির্মাণশৈলীর, রুচিশীল আর গোছানো একটা বাংলা নাটক দেখতে পেলাম ❤️
আমরা যারা ৯০ এর দশকের শেষে বা ২০০০ এর দশকে বাংলা টিভি নাটকের কাজ দেখতে দেখতে বড় হয়েছি, তারা এরকম গোছানো নাটকের সাথে অনেকটাই পরিচিত৷ কিন্তু এর পরের সময়টাতে ধীরে ধীরে এদিকটায় বড় পরিবর্তন আসে।

🔸 চিরকাল আজ 🔸

চ্যানেল আর নাটকের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ভালো কাজের সংখ্যা বা মান দুটোই যেন কমতে শুরু করে৷ একইসাথে ইন্টারনেটের কল্যাণে বাইরের ভালো ভালো কাজ দেখার সুযোগের সহজলভ্যতার জন্য হোক বা আমাদের নাটকের মানের অবনতির জন্য হোক, বাংলা নাটকের প্রতি ইন্টারেস্ট অধিকাংশেরই কমতে শুরু করে।

যেটা আমার ক্ষেত্রে ক্রমে কমতে কমতে বছরে ১/২টাতে গিয়ে ঠেকেছে এখন। তবে বাংলা নাটকের এই অস্থির সময়ে আবার কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে এমন আশার আলো হয়েই যেন এই নাটকটার দেখা মিললো। তাই নাটকের প্রতি ভালোলাগা আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে গ্রুপকে বেছে নিলাম।

📌 This may contain light spoiler

🌿 ‘চিরকাল আজ’ নাটকের যে ব্যাপারটা আমাকে সবচেয়ে অবাক করেছে সেটা এর মেকিং। যেকোন কাজের ক্ষেত্রে পরিচালকের গল্প বলার ধরন বা পর্দায় উপস্থাপনের কৌশল আমাকে বেশি মুগ্ধ করে আর এটার বেলাতেও তাই হয়েছে।

স্মার্টফোনের ইতিহাস আর উদ্ভাবনে স্টিভ জবসের অবদান

একটা ভালো কাজ দেখার সময় যখন এর ছোট ছোট ব্যাপারেও পেছনের কারিগরের যত্নের ছাপ ধরতে পারা যায়, তখন সেটার প্রশংসা না করে পারা যায় না। আমার মতে নাটকের পরিচালক এক্ষেত্রে শতভাগ কৃতিত্বের দাবিদার। আর তার গুণেই নাটকের কলাকুশলীদের সবাই অভিনয়ে তাদের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে একটা ভালো নাটক আমাদের উপহার দিতে পেরেছেন।

সামনে এগিয়ে যেতে আইনস্টাইনের ১২টি উক্তি

🌿 মেহেজাবিন চৌধুরী রূপ-লাবণ্যে অনন্যা এবং একইসাথে সু-অভিনেত্রী, সে প্রমাণ তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। গত কয়েক বছরে তাকে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে বিভিন্ন রুপে আমরা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু লোডশেডিং এর রাতে মোমবাতির মায়াবী আলোয় কিংবা ঝুমবৃষ্টির রাতে রাস্তার আবছা আলোয় তার সৌন্দর্যের মাধুর্য যে এক আলাদা কমনীয়তা নিয়ে দর্শকের চোখে ধরা দেবে তা এর আগে কেউ কি কখনো ভেবেছিল? আমার জানা নেই।

অভিব্যক্তির পরিবর্তন

স্মৃতিভ্রমের পর থেকে প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে তার অভিব্যক্তির পরিবর্তন, ইমোশনগুলোর নিঁখুত এক্সপ্রেশন, এবং কোনভাবেই অভিনয়কে অতিরঞ্জিত না করা … এসবকিছুই প্রমাণ করে অভিনয় নিয়ে তার নিরলস ডেডিকেশন। এই নাটকের তিথি চরিত্র তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে এটা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়।

🌿 আফরান নিশো বরাবরই ভালো অভিনয় করেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পড়ার টেবিলে বারবার ভালোবাসি বলে যাওয়ার দৃশ্যটা মনে দাগ কেটে যাওয়ার মত। পুরো নাটকেই তার অভিনয় ভালো ছিল।

🌿 নাটকে ক্যামেরার কাজ, সংলাপ, কলাকুশলীদের মেকাপ, সাজসজ্জা প্রতিটা ক্ষেত্রে পরিচালক তার স্বকীয়তা ফুটিয়ে তুলেছেন। বৃষ্টির রাতে ভালোবাসি বলার দৃশ্য, কিংবা রাতের আকাশে কাল্পনিক অরোরা দেখার স্বপ্ন এমন বেশ কিছু দৃশ্য মনে আলাদা একটা রেশ রেখে যাবে।

ধৈর্য নয়, বরং নিজের অভ্যাস ও নিজে বদলে যান

মেহেজাবিনের স্মৃতিভ্রমের আগের ও পরের সময়ের যে চেঞ্জ তার গেটাপে আনা হয়েছে সেটা প্রশংসনীয় ছিল। আবার তিথির মা চরিত্রে সাবেরী আলম যখন একমাত্র মেয়ের অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়ে হাসপাতালে বসে আছেন, নিজ সন্তান যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, সেসময়ে তার অপরিপাটি কেশসজ্জা, চোখেমুখে এক শূন্য দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষা.. এরকম ছোট ছোট ডিটেইলস এর কাজ আলাদা করে নজর কেড়েছে।

বাংলা নাটকে ভালো কাজ দেখলে খুব বেশিই আনন্দ আর গর্ববোধ কাজ করে। আমাদের দেশে ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন ঠিকই, কিন্তু তাদের দিয়ে সঠিক কাজটা বের করে আনার মত দক্ষ কারিগরদের একটা কমতি রয়ে গেছে। আশা রাখি Vicky Zahed এর মত পরিচালকরা হাল ধরে এ অবস্থার মুক্তি ঘটাতে সক্ষম হবেন।

শুভকামনা আর কৃতজ্ঞতা ‘চিরকাল আজ’ টিমের জন্য 💖

যারা কপি বা অনুপ্রাণিত বলছেন তাদের জন্য আলাদা করে বলা, স্মৃতিভ্রম ব্যাপারটা অনেক ড্রামা মুভিতেই এসেছে, সেটা হোক বাংলা, ভারতীয় কিংবা হলিউড। আমারও নাটক দেখার সময় কোরিয়ান এ মোমেন্ট টু রিমেম্বার এর কথা মনে পড়েছে, হলিউড Fifty first dates মনে পড়েছে; তবে সেটুক কেবল মেমোরি লস টপিকের জন্যই, এছাড়া আর কোন মিল পাইনি এতে।

আমাদের ওপরে নজর রাখছে ভিনগ্রহের উপগ্রহ

একদমই ভিন্ন আর ইউনিক গল্প ছিল “চিরকাল আজ”। A Moment to Remember এর থেকে কপিড বা অনুপ্রেরণা এগুলো বলে এই কাজটাকে ছোট করা হোক সেটা চাই না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *