বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় ঘটনার ব্যাখ্যা পর্ব-২

SubTitle Bro  তে  আপনাদের স্বাগত। আমরা আমাদের আগের আর্টিকেলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর প্রথম পর্বে এই এলাকাটি ঘিরে রহস্যের ব্যাপারে আলোচনা করেছিলাম। আপনারা যদি আমাদের আগের আর্টিকেলটি না পড়ে থাকেন তাহলে এখানে ক্লিক করে প্রথম পর্বটি অবশ্যই পড়ে নিবেন। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর দ্বিতীয় পর্বে আমি আপনাদের জানাতে চলেছি এই রহস্যের ব্যাখ্যা সম্পর্কে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় ঘটনার ব্যাখ্যা

আজ অবধি বিজ্ঞানীরা বা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা এই রহস্য সম্পর্কে কি কি ব্যাখ্যা দিতে পেরেছেন তা আজ আপনারা জানতে পারবেন। মানবজাতি চিরকালই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃতির সমস্ত রহস্যভেদ করার চেষ্টা করে এসেছে। তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে বেশ কয়েকদশক ধরে বহু লেখক বিভিন্ন মতবাদ পোষণ করে এসেছে যেগুলি বাস্তবে অসম্ভব বলে মানা যায়।

যেমন ভিনগ্রহী প্রাণীদের অস্তিত্ব, দানবাকৃতি সামুদ্রিক প্রাণী, অপ্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হওয়া দুর্যোগ, আটলান্টিক মহাসাগরের নিচে ডুবে থাকা আটলান্টিসের কোনো যন্ত্র যা অন্য সময় বা যুগে এই জাহাজ বা বিমানগুলিকে প্রেরণ করে দিয়েছে। এইসমস্ত ব্যাখ্যাগুলি খুবই অবাস্তব ও অতিরঞ্জিত। এইসব তত্বগুলিকে পুরোপুরি বিরোধ করে লেখক ল্যারি কোচে (Larry Kusche) ১৯৭৫ সালে প্রকাশ করেন The Bermuda Triangle Mystery: Solved নামের বইটি।

এই বইটিতে তিনি সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দেন সমস্ত রহস্যের যুক্তিকে। তিনি এই বইটিতে লেখেন যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর কোনো রহস্যই ছিলোনা। এরকম বহু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে তিনি লেখকদের দ্বারা অতিরঞ্জিত বলে আভিযোগ করেন। তিনি বলেন যে পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের সমুদ্রে বিমান বা জাহাজ যে হারে নিখোঁজ হয়েছে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলে সেই হার তার থেকে কোনো বেশি নয়।

জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটতেই পারে

তাঁর এই মতবাদগুলির সাথে তৎকালীন অনেকেই সহমত প্রকাশ করেন যে এটা সত্যিই যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর ঘটনাগুলিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে শুধুমাত্র টেলিভিশন বা সিনেমার পর্দায় গল্পকাহিনী বানিয়ে দর্শকদের মন জয় করবার জন্যে। ল্যারি কোচে বলেন যে এই অঞ্চলটিতে এমনিতেই ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন হয়ে থাকে, সেখানে এরকম বিপর্যয় আর জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটতেই পারে। তিনি ও বলেন যে বেশিরভাগ বিমান বা জাহাজডুবির ঘটনা যা ঘটেছে তা হলো অনভিজ্ঞ চালকদের জন্যেই।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় এক ঘটনা পর্ব-১

মার্কিন সরকারের মতে বিভিন্ন বই বা পত্রিকা অনুযায়ী যেখানে দাবি করা হয়েছে যে বহু হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বা নিখোঁজ হয়েছে এই অঞ্চলে তা ভুয়ো। সরকারি তথ্য অনুযায়ী এ যাবৎ নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৯০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে। তাহলে আর কি? সব রহস্যের তো সমাধান হয়েই গেল? না, রহস্যের সমাধান এখানেই এতো সহজে হয়নি। অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়নি। যেমন, ১৯৪৫ সালে যে পাঁচটি মার্কিন বোমারু যুদ্ধ বিমান হারিয়ে যায়, বা ১৯১৮ সালে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ USS Cyclops এরকম আরো অনেক উদাহরণ, এদের চালকরা মোটেও কাঁচা বা অনভিজ্ঞ ছিলেন না।

রহস্যজনক কিছু বিমান দুর্ঘটনা যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়

এছাড়াও কম্পাস এর ভুল দিক নির্ধারণ সত্যিই হয়েছিল। এসব অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা প্রয়োজন ছিল। বিশেষজ্ঞরা এটা বলেন যে পৃথিবীর চৌম্বকীয় মেরুর সাথে ভৌগোলিক মেরু এর দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে কম্পাসে কিছুটা বিচ্যুতি আসে আর এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণ মানুষ এই ব্যাপারটা নিয়ে কম জানে তাই হয়তো এই নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এছাড়াও আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হারিকেনের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে।

Straits of Florida

তাহলে এরকম ভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জাহাজ বা বিমান হারিয়ে যেতেই পারে। মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা (Straits of Florida) হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে এক উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। একে বলা যায় মহা সমুদ্রের মাঝে এক নদী যার নাম গলফ স্ট্রিম। নদীর স্রোতের মত গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তু কে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারে।

এর জন্যেও বহু দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়। এছাড়াও মনে করা হয়েছে যে বিভিন্ন জাহাজডুবি বা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা যুদ্ধের সময় শত্রূপক্ষের দ্বারা আক্রমণের ফলে হয়ে থাকতে পারে। এরকমভাবে ১৯৪১ সালে USS Proteus এবং USS Nereus জার্মান নেভির দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু অবশ্য জার্মানদের রেকর্ড থেকে এরকম কিছু প্রমান করা যায়নি।

জলদস্যুদের আক্রমণ এর সম্ভাবনাকেও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায়না যেমন ১৮৭২ সালের Mary Celeste যে জলদস্যু আক্রমনে ধ্বংস হয়নি তা কিন্তু বলা যায়না। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য সমাধানের জন্যে ভূবিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি গবেষণায় দাবি করেছে যে সম্ভবত সমুদ্রের ভূতল থেকে মিথেন গ্যাসের বুদ্বুদ সৃষ্টি হওয়া এই সমস্ত বিমান বা জাহাজ দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্ত রহস্যভেদ

এইসমস্ত কিছুর মিলিত ফলেই হয়তো এই অঞ্চলে এরকম বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। আশা করবো একদিন মানবজাতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সমস্ত রহস্যভেদ করতে সক্ষম হবে যেরকম আজ অবধি করে এসেছে। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর রহস্য থেকেও সমস্ত রহস্যের পর্দার উদ্ঘাটন হবে।

কলকাতায় অবস্থিত খুব ভয়ানোক ভুতুড়ে এক স্থান

কিন্তু আমার এই আর্টিকেলটি শেষ করার আগে আমার মনেও প্রশ্ন থেকে যায় যে ১৯৪৫ সালে যে পাঁচটি মার্কিন যুদ্ধবিমান হারিয়ে গেল তখন ফ্লাইট লিডার Lieutenant Charles C বেতার মাধ্যমে সর্বশেষ কথোপকথনে বলতে থাকেন যে তার কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। চারপাশের পরিবেশ অদ্ভুত দেখাচ্ছে, এমনকি সমুদ্রও অদ্ভুত লাগছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

তিনি ও বলেছিলেন সমুদ্রের জলের রং অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ১৯১৮ সালে এতো বড়ো জাহাজ USS Cyclops হারিয়ে যাওয়ার আগে কেন কোনো বিপদবার্তা দেয়নি? এদের কোনো ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি এখনো অবধি। আপনার কি মনে হয়? বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে? নাকি এখনো অনেককিছু জানতে বাকি আছে? কমেন্টে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *