আমাদের ওপরে নজর রাখছে ভিনগ্রহের উপগ্রহ

হ্যালো বন্ধুরা আজ আরেকটি ইন্টারেস্টিং টপিক নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন এই আর্টিকেলের সাথে। আমাদের জগৎ রহস্যে মোড়া। এরকম বহু রহস্য বিজ্ঞানীরা আজও উদ্ধার করে উঠতে পারেনি। আবার অনেক রহস্যের সম্বন্ধে সরকারের কাছে অনেক তথ্য থাকলেও তা জনগণের কাছ থেকে সম্পূর্ণ গোপন করা হয়।

ভাবছেন কেন? কেনই বা এমন করবে সরকার? হ্যাঁ তা হয়। আর এর থেকেই উদ্ভব বিভিন্ন Conspiracy Theory বা ষড়যন্ত্র তত্বের। আপনিও একটি গভীর ষড়যন্ত্রের স্বীকার। এরকমই একটি তত্ব ব্ল্যাক নাইট স্যাটেলাইট। এই তত্ব দাবি করে যে একটি বহির্জাগতিক বস্তু বা উপগ্রহ আমাদের পৃথিবীকে বহু বছর ধরে প্রদক্ষিণ করে চলেছে শুধুমাত্র আমাদের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাবার জন্যে।

আমাদের ওপরে নজর রাখছে ভিনগ্রহের উপগ্রহ

UFO বিশেষজ্ঞদের একদলের গভীর আরোপ আমেরিকার স্পেস এজেন্সী NASA এর ওপর যে নাসা ও আমেরিকার সরকার মিলিত ভাবে সমস্ত তথ্য গোপন করে চলেছে। ঘটনাটি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৮৯৯ সালে যখন বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা তাঁর নিউ ইয়র্কের কলোরাডো স্প্রিং এর ল্যাবরেটরি তে Wireless Technology নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন।

ভিনগ্রহের উপগ্রহ

উনি সেই সময় Wardenclyffe Tower বা টেসলা টাওয়ার নির্মাণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। উনি লক্ষ্য করেন যে তার রেডিও তরঙ্গ প্রেরক যন্ত্র কিছু অদ্ভুত রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ করছে। উনি মত প্রকাশ করলেন যে রেডিও তরঙ্গ বহির্জাগতিক বা অন্য কোনো গ্রহ থেকে আবির্ভুত হচ্ছে।

ফেসবুক ও ইউটিউব জগতে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় মূখ সালমান শুখন

রেডিও টেকনোলজি ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯২০ সাল নাগাদ। তখন অনেক পদার্থবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান কৌতহলীরা রেডিও তরঙ্গের গবেষণা করতেন। এরকমই একজন ছিলেন নরওয়ের একজন ইঞ্জিনিয়ার Jørgen Hals। ১৯২৭ সালে Jørgen Hals নরওয়ের অসলো তে গবেষণা করতে গিয়ে কিছু অপ্রত্যাশিত দীর্ঘ প্রলম্বিত রেডিও তরঙ্গের প্রতিধ্বনি লক্ষ্য করেন।

নরওয়ের পদার্থবিজ্ঞানী Carl Størmer

উনি ঘটনাটির ব্যাপারে নজর আকর্ষণ করার জন্যে চিঠি লিখলেন নরওয়ের পদার্থবিজ্ঞানী Carl Størmer কে। এই ব্যাপারে তিনি অনেকটাই সাহায্য পেলেন পদার্থবিজ্ঞানী Van der Pol এর কাছ থেকে। ১৯২৮ সালে Hals, Størmer, Van der Pol তিনজনেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করেন।

অস্বাভাবিক দীর্ঘ প্রলম্বিত রেডিও তরঙ্গের প্রতিধ্বনি এর অস্তিত্ব অবশ্যই ছিল কিন্তু এটি বিক্ষিপ্ত হওয়ার দরুন তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারেননি। দেওয়ার মতো প্রযুক্তি তাঁদের কাছে তখন ছিলনা । ১৯৫৪ সালে আমেরিকার কিছু সংবাদমাধ্যমে কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এগুলো ছিল UFO বিশেষজ্ঞ Donald Edward Keyhoe এর লেখা।

উনি লাগাতার অনেকগুলি লেখা ও কিছু বইও প্রকাশিত করেন এই ঘটনাগুলির সম্পর্কে। তিনি দাবি করেন যে US air force কিছু অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে দেখেছে। যদিও সেইসময় আমেরিকা , সোভিয়েত ও পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশের কাছেই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার মতো কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথে স্থাপন করবার প্রযুক্তি ছিলনা।

ইতিহাসের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ

সেইসময় ছিল সোভিয়েত ও আমেরিকার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই বা Cold War এর সময়। দুই মহাশক্তির মধ্যে তখন মহাকাশ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। ১৯৫৭ সালে অক্টবর মাসে এরই মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন মানব ইতিহাসের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হিসাবে স্পুটনিক ১ কে মহাকাশে কক্ষপথে স্থাপন করে।

ভিনগ্রহের উপগ্রহ

ঠিক সেই বছরেই নভেম্বরে স্পুটনিক ২ উৎক্ষেপণের সময় Dr Luis Corralos যিনি Communications Ministry, Venezuela এর থেকে উপস্থিত ছিলেন দুর্ঘটনাক্রমে এই রহস্যজনক ব্ল্যাক নাইট উপগ্রহ এর ছবি তোলেন। ১৯৬০ সালে ৭ মার্চ Time Magazine এ প্রকাশিত হয় যে US সরকার কিছু অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ করতে দেখেছে।

প্রথমে যাকে সোভিয়েত এর গুপ্তচর কৃত্রিম উপগ্রহ হিসাবে ভুল করা হয়। এখানে লেখা হয়েছিল যে বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী এই বস্তুটির ওজন প্রায় ১০ টনের সমান। তখন এমন কোনো প্রযুক্তি মানুষের কাছে ছিলনা যে অত ভারী বস্তুকে মহাকাশে স্থাপন করতে পারে।

Grumman Aircraft Corporation

১৯৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর Grumman Aircraft Corporation যা কিনা USA এর একটি সবথেকে বড় এয়ারক্রাফট প্রস্তুতকারী সংস্থা তাদের একটি রাডার এ এই ব্ল্যাক নাইট স্যাটেলাইট এর অস্তিত্ব ধরা পরে। Long Island এ অবস্থিত তাদের ফ্যাক্টরির ট্র্যাকিং ক্যামেরা থেকে এই অদ্ভুত জিনিসটির বেশ কিছু ছবিও তোলা হয়।

Grumman Aircraft Corporation সেই তথ্যগুলিকে একত্র করে ও এর ওপর গবেষণা করার জন্যে একটি কমিটিও গঠন করে কিন্তু তথ্যগুলিকে জনসমক্ষে বা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়নি। ১৯৬৩ সালে NASA, প্রজেক্ট mercury এর মাধ্যমে আমেরিকার প্রথম মহাকাশচারী হিসেবে গর্ডন কুপার মহাকাশে যান।

প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ছুটতে হবে স্বপ্নের পিছুপিছু এ পি জে আব্দুল কালাম

প্রজেক্ট মার্কারি তে যে ৭ জন মহাকাশচারী ছিলেন তাদের মধ্যে গর্ডন কুপার ছিলেন কনিষ্ঠতম। একটি উজ্বল সবুজ বস্তু তার ক্যাপসুলের দিকে এগিয়ে আসতে লক্ষ্য করেছিলেন এবং ঘটনাটি তিনি রিপোর্ট করেছিলেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ এর মধ্যে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞানী ও লেখকদের একটি দল দাবি করেন যে ব্ল্যাক নাইট স্যাটেলাইট থেকে আসা সিগনালকে ডিকোড করা সম্ভব হয়েছে এবং তারা দাবি করে যে এটি বহির্জাগতিক একটি স্যাটেলাইট এবং এটি ১৩০০০ বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে আসছে।

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন স্কটিশ লেখক ডানকান লুনান। পরে অবশ্য নিজেই তিনি তাঁর দাবিকে অস্বীকার করেন ও মিডিয়াকে জানান যে এই তথ্য ভুল ও তাঁর পদ্ধতি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। ১৯৯৮ সালে এক মহাকাশচারী যিনি মহাকাশযান Endeavor এ আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এ যাচ্ছিলেন তিনি এই বস্তুটির ছবি তোলেন। ছবিটি অবশ্য NASA এর অফিসিয়াল সাইট এ রয়েছে। কিন্তু NASA এর থেকে এটিকে শুধুমাত্র একটি মহাকাশযান বা উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

তো ? NASA কি আমাদের থেকে কিছু লুকোতে চাইছে? আজও কি ব্ল্যাক নাইট পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে? ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই আরেকবার এই বস্তুটি দুটি ভিন্ন জায়গায় দুই ব্যাক্তির ক্যামেরায় ধরা পড়ে যখন তারা দুজনেই একই সময়ে চাঁদের ফটোগ্রাফ নিয়েছিলেন।

এই বস্তুটিকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এর পাশ দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়। তত্ব, তথ্য, বিতর্ক এই সবের মধ্যে এই মহাকাশে ভাসমান বস্তুটি একটি ধোঁয়াশা কারণ এ সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্য কোনো সরকারই দিতে চায় নি। ব্ল্যাক নাইট কি তবে এলিয়েনদের পাঠানো কোনো উপগ্রহ? তারা কি সত্যিই আমাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়? নাকি শুধুমাত্র কোনো উপগ্রহ বা মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *